নিজস্ব সংবাদ নির্মাতাঃ পশ্চিমবঙ্গে পালাবদলের হাওয়া কর্মসংস্কৃতির পালে এসে লাগলো। গত ৩৪ বছর ধরে বামেদের অপশাসনকালে সমস্ত রাজ্য সরকারি এবং আধা সরকারি কর্মচারীদের কর্মসংস্কৃতি যেইরকমভাবে তিলে তিলে ধ্বংস করা হয়েছিলো, তা যে কোন সরকারি কর্মস্থানে গেলেই হাতেনাতে টের পেতেন সাধারন মানুষ। লাল ফিতের ঘেরাটোপে যেকোন কাজ আদায় করতেই জুতোর শুকতলা খসিয়ে ফেলতে হতো। খোদ মহাকরনে ঘুঘুর বাসা কোঅর্ডিনেশন কমিটির দৌরাত্ম্য এমন ছিলো যে ৪টে বাজতে না বাজতেই বাবুরা অফিস থেকে হাওয়া হয়ে যেতেন, মিটিং মিছিলের সময় অফিস খালি করে ভিড় বাড়াতে নিয়ে যাওয়া হতো তাদের। ‘পরিবর্তন’ যে শুধু মাত্র একটি স্লোগান নয়, তা প্রমান করতে উঠেপড়ে লেগেছেন পরিবর্তনের কান্ডারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। লুন্ঠিত কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার জন্যে তাই তিনি প্রথমেই বেছে নিয়েছেন তার নিজের কর্মস্থল, মহাকরন।
সম্প্রতি মূখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে মহাকরনের সমস্ত কর্মচারীদের কাছে আলগা বার্তা পৌছে দেওয়া হয়েছে যে গতানুগতিক কাজের পরিবেশ এবং কর্মসংস্কৃতিকে কে অনেক উন্নত করতে হবে। মমতা ব্যানার্জীর ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, এই লক্ষ্যে মূখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টারা (যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়)কয়েকটি প্রধান জায়গা চিহ্নিত করেছেন। এক, জানানো হয়েছে যে মহাকরনের কর্মচারীদের সময় মতন অফিসে পৌছতে হবে এবং সময়ের আগে বেরনো চলবে না। এছাড়াও কর্মচারীদের ৩টে আলাদা শিফটে ভাগ করে দেওয়া হবে, এশিয়া শিফট, ইউরোপ শিফট এবং নর্থ আমেরিকা শিফট। এর ফলে রাজ্যের কাজ যেমন হবে, তেমনই আবার ইউরোপ এবং নর্থ আমেরিকার বিভিন্ন কর্তাব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ এবং কাজেরও সুবিধে হবে। মমতা ব্যানার্জী এবং তার ক্যাবিনেট প্রথমদিন থেকেই গভীর রাত অবধি কাজ করবার রীতি চালু করেছেন। সেইখানেই সকালের বাসি ঠান্ডা দুধ চা খেয়ে অম্বলে আক্রান্ত হয়ে পড়েন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, যার জন্যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাই রাত জেগে কাজ করবার সময় যেন চা বিস্কুটের জোগান থাকে, সেইদিকেও নজর দেবেন রাত্রের শিফটের কর্মীরা। দুই, জানানো হয়েছে যে ইউনিয়ন রুমে তাস খেলা থেকে শুরু করে খবরের কাগজ নিয়ে আড্ডা, এইধরনের কাজকর্ম বন্ধ করা হবে। তার জায়গায় সকাল থেকে ইউনিয়ন রুমে চলবে লো ভলিউমে রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং বাংলার মহর্ষিদের বানী। তার মধ্যে যোগব্যাম, প্রানায়ম এবং ধ্যানের জন্যে মাসে একবার করে ওয়ার্কশপ করবেন বাবা রামদেব এবং রবিশঙ্কর। এতে করে কর্মচারীদের মধ্যে চিত্তচাঞ্চল্য কমবে, তারা মানসিক স্থিরতা অর্জন করবে এবং কর্মে মন বসবে। তিন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে কাজ করা, যাকে বলে ‘সেডেন্টারি লাইফস্টাইল’, এর ফলে কর্মচারীদের মেদ বাড়ছে, ভুড়ি বাড়ছে, এবং ধমনী এবং মগজে চর্বির মাত্রা বাড়ছে। এর ফলে পরবর্তী জীবনে নানান রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। এর বিধানস্বরুপ প্রত্যেক কর্মচারীর জন্যে একটি করে এক্সারসাইজ সাইকেল কেনা হচ্ছে। এই সাইকেলের সাথে জোড়া থাকবে একটি ডাইনামো যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আশা করা হচ্ছে যে সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে একে ছড়িয়ে দিতে পারলে রাজ্যের বিদ্যুৎ সঙ্কটের অনেকটাই সুরাহা হবে।
পরিবর্তনের ছোয়া এবার মহাকরনে |
এই সমস্ত বিষয়ে নিয়ে সাংবাদিকরা যখন মমতা ব্যানার্জীকে প্রশ্ন করেন তখন তিনি জানান ‘চ্যারিটি বিগিনস এট হোম। এই মহাকরন থেকেই শুরু করলাম এই জন্যে।‘ তিনি আরও জানান, এই বিভিন্ন ভালো কাজে বারেবারে ভেতর থেকে চক্রান্ত্র করে নাশকতা করবার চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম। নাম উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, ‘সিপিএমের বিভিন্ন নেতারা আমাদের কট কট করে কটাক্ষ করছে। কিন্তু মানুষ ওদের সাথে নেই। আমরা স্বামী বিবেকানন্দ, মাতঙ্গীনি হাজরা, সুভাষ বোসের আদর্শে অনুপ্রানিত। সুভাষ বোস কলকাতার মেয়র থাকাকালীন পুরভার কর্মীরা যখন বেতন বাড়ানো নিয়ে আন্দোলন করছিলো, তখন তাদের উদ্দ্যেশে বলেছিলেন, কর্ম করে যাও, ফলের কথা চিন্তা করো না। বিবেকানন্দ নিউ ইয়র্কে সভা করে বলেছিলেন, আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘন্টা ফুটবল, আট ঘন্টা গীতা। স্বামীজির সেই বানীর উদ্দ্যেশে রবীন্দ্রনাথ গান লিখেছিলেন -এই কথাটি মনে রেখো। কাজ করতে করতে সহজেই শ্রান্ত হয়ে পড়েন যারা তাদের উদ্দীপ্ত করতে তিনি গান লিখেছিলেন – ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু। বাংলার সেই হৃত গৌরব আমরা ফিরিয়ে আনবো।‘
আমরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, সত্যি কি মূখ্যমন্ত্রী পারবেন বাংলার কর্মসংস্কৃতির পালে নতুন হাওয়া লাগাতে? মানুষ বলছে, পারবেন।
No comments:
Post a Comment