Search This Blog

Thursday 21 July 2011

ব্রিগেডে মুক্তির সুর, সাক্ষী বাংলা



মানুষ। আর মানুষ। অসংখ্য মানুষের ভিড়ে ঢেকে গেলো কলকাতা। রথের মেলার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার গল্প লিখেছিলেন বঙ্কিম, তার লেখনীতে বাঙালি খুঁজে পেয়েছিল গলে যাওয়া সমাজ থেকে মুক্তির দিশা। আর আজ সারা শহর যেন হারিয়ে গেল শহরের নিজের ভিড়েই। কলেজ স্ট্রীট, রবীন্দ্রসদন, শ্যামবাজার সবই ছিল আজ মমতার। আর শুধু মানুষ কেন? গত ৩৪ বছরে অত্যাচারী বামপন্তীদের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হয়ে যাওয়া সেই ৫৫,০০০ বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের আত্মারাও যে বাংলার মুক্ত আকাশে বাতাসে এই আনন্দের রেশ নিয়ে মুচকি হাসছিলো না, তা কি কেউ হলফ করে বলতে পারবে? স্বাধীনতার পরের দিন কি এত মানুষকে দেখেছিল কলকাতার রাস্তা? প্রশ্নটা থেকে গেল।

আজ  এক নতুন স্বাধীনতা দিবসের উচ্ছাস দেখলো আপামর মানুষ, বামপন্থী সংস্কৃতির নামে আনন্দকে ব্রাত্য করে রাখার অভ্যেস, রাজনীতির নামে কারখানা বন্ধের কৌশল, সভার নামে বিরক্তিকর বক্তৃতা চায় না এই ইন্টারনেটলালিত, ফেসবুকমত্ত প্রজন্ম। তারা চায় গতি, তারা চায় নতুন উচ্ছাস, তারা চায় বেঁচে থাকায় ভুল করার স্বাধীনতা। রবীন্দ্রনাথ তারা শোনে, তারা শোনে গিটারের বাদ্যের সাথে, যা দেখে কিছুদিন আগেও অচলায়তন গড়ে তুলেছিলেন রবি-পন্ডিতরা। তারা মাথা ঘামায় না সাল তারিখে। তাই রবি ঠাকুরের গানকে যিনি মাথায় করে রেখেছেন সেই মমতার সামান্য সাল তারিখ ভুল নিয়ে ঝড় তুলুক বামপন্থী ফসিলেরা। গতিশীল নতুন প্রজন্মের তাতে থোড়াই কেয়ার।আর তাই জননেত্রী দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষনা করলেন ২২শে শ্রাবন তিনি মহাড়ম্বরে পালন করবেন কবিগুরুর জন্মদিন। এবং পুরনো সনাতন প্রথার কপাটে সজোরে ধাক্কা মেরে এই যে নিয়ম ভাঙ্গার আহ্বান, সমবেত জনতা সশব্দ করতালিতে গ্রহন করলেন তাকে।

আজ  ব্রিগেডে টলিঊডের তরুন প্রজন্মের প্রতিনিধি দেব নিয়ে আসলেন নতুন বার্তা।পাগলু ড্যান্স।পাগলু- থোড়া সা কর লে রোম্যান্স। হে বীর শহীদ, আসুন আপনাদের মুখ থেকে রক্ত মুছে সেখানে লাগাই প্রেমের ছোয়া। সত্যি তো টলিউডের বাণিজ্যকে যারা বিশ্বের দরবারে নিয়ে গেছেন তাকে দূরে সরিয়ে রাখবে কে? তাকে তো মেশাতে হবে আজকের এই স্বাধীনতা সংগ্রামের উচ্ছাসে। আর তার সাথেই মিশে গেলো টলিউডের প্রাক্তন অভিনেতা তাপস পালের আবেগময় কন্ঠের 'এ আমার গুরুদক্ষিণা'। অসংখ্য মানুষ যারা কমিউনিস্ট বিরোধী লড়াই-এ শহীদ তাদের সবার হয়েই এই দক্ষিণা তাপসের। শহীদ দিবসের আবেগের সাথে মিশে গেলো দেবশ্রী, শতাব্দী দুই কন্যার নৃত্যের তাল। আর তাতে সংগত দিলেন অনুপ ঘোষাল। সত্যজিতের ঐতিহ্য মিশলো ব্রিগেডের জনপ্লাবনে।নিজের লেখা গানে ব্রিগেডকে মাতালেন নচিকেতা।চিরঞ্জিত বললেন আজ শহীদ দিবস, আসুন তাকেও আনন্দের উৎসব করে তুলি। মেতে উঠি আদি অকৃত্রিম মজাতে।

আর এই আনন্দ উৎসবের সাথে মিশলো, মহাশ্বেতার আশির্বাদ, রিজওয়ানুরের মা'র ভালোবাসা। মমতার বক্তব্যে মিশে গেলো রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল, শান্তি বার্তা, থেকে ইনশাল্লার সুর। মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষটি এলিটিসমের সাথে মেশালেন প্রতিদিনের খেটে খাওয়া মানুষের স্বপ্নকে। পোল্যান্ডের ওয়াজদাকে মনে করিয়ে দেওয়া মমতা নিজেই গাইতে থাকলেন জন গন মন অধিনায়ক হে।কে বলবে তার গলা ভাঙ্গা, তার আবেগ তো অটুট।


কিন্তু কি বার্তা দিলেন বার্লিন দেওয়াল ভাঙার উত্তরাধিকারিনী, আসলে এই ছক ভাঙ্গা শহীদ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে উনি দেখালেন অতীতের দিকে তাকানোর দিন শেষ। সংস্কৃতির সাথে মিশে যাবে রাজনীতির স্বর। আর এই মুক্ত সংস্কৃতি নিয়ে আসবে মুক্ত অর্থনীতি। যে কাজটা তাড়াহুড়ো করে করতে গিয়ে বুদ্ধদেবের পতন। তাকেই আরো সুচারু রূপে সারবেন মমতা। কারণ তার হাতেই তো এখন রাজ্যের সব মাটি, পেছনের সব শিল্পপতি থেকে শুরু করে চায়ের দোকানের মানুষ, আর মা হিসেবে রয়েছেন বাংলা মা। ওয়াজদা, পাস্তেরনাক, সলজিৎস্লিনের সুরে মিশুক মা মাটির সুর। গড়ে উঠুক নতুন বাংলা।

No comments:

Post a Comment